ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন। তার দুই হাতের আঙুলগুলো হঠাৎ করেই শক্ত হয়ে পাথরের মতো হয়ে গেছে। দেখতেও অনেকটা কালচে রঙের, যেন আগুনে পোড়া। ফলে স্বাভাবিক কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না তিনি।
চিকিৎসকরা বলেছেন, ৩৮ বছর বয়সী নুরুল আমিন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ভাস্কুলাইটিস রোগে আক্রান্ত। আর এটি বিরল ব্যাধি। এ রোগের কারণেই নুরুল আমিনের দুই হাতের আঙুল শুকিয়ে কালচে রঙের হয়ে গেছে।
জানা গেছে, নুরুল আমিন দোকানে দোকানে স্টেশনারি সামগ্রী ডেলিভারি করতেন। স্ত্রী এবং তিন মেয়ে নিয়েই তার সংসার। স্টেশনারি পণ্য ডেলিভারি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলত তার। কিন্তু রোগাক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই কাজ বন্ধ করে বাড়িতে বসে আছেন।
গত জানুয়ারি মাস থেকে হঠাৎ করে দুই হাতের বৃদ্ধাঙুল ছাড়া বাকি আট আঙুলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকেন নুরুল আমিন। ধীরে ধীরে আঙুলগুলোর রঙ হয়ে ওঠে কালচে। সেই সঙ্গে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায় আঙুলগুলো। একটি হাতের আঙুল দিয়ে অন্য হাতের আঙ্গুলে স্পর্শ করতে গেলেই ঠক করে শব্দ হয়। এখন ছোট-খাটো কাজের জন্যও তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়।
নুরুল আমিন জানান, ব্যথা সহ্য করতে না পেরে এবং আঙুলগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাওয়ায় প্রথমে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু তার রোগের চিকিৎসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হবে না বলে জানান চিকিৎসক। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ঢাকায় যান। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহীনকে দেখান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে জানানো হয়, তিনি বিরল ব্যাধি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ভাস্কুলাইটিস রোগে আক্রান্ত। এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল।
নুরুল আমিন বলেন, এই রোগের কারণে আমি এখন কোনো কাজই করতে পারছি না। আমাকে ভাতও খাইয়ে দিতে হয়। অন্যের সাহায্য ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারি না। স্টেশনারি পণ্য ডেলিভারির যে কাজ করতাম, সেটিও এখন বন্ধ। বাধ্য হয়েই ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। তেমন সহায় সম্পদও নেই যে চিকিৎসা করাব। ১৫ দিন পর পর ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। পূর্ণ চিকিৎসার জন্য ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা আমার পরিবারের যোগান দেওয়া সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েগুলোকে একটু আদরও করতে পারি না। হৃদয়বানদের কাছে আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা চাইছি। সবার সহযোগিতায় আমি সুস্থ হয়ে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই।
নুরুল আমিনের মেয়ে নাজিফা জানায়, তার বাবা তাকে আদর করতে পারে না, কোলে নেয় না। বাবার জন্য তার অনেক খারাপ লাগে। বাবার চিকিৎসার জন্য সে সবার সহযোগিতা চায়।
নুরুল আমিনের স্ত্রী সাহিদা বেগম জানান, স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তারা। ভিটে-বাড়ি অবশিষ্ট আছে। স্বামীর চিকিৎসার জন্য সরকার এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ফাইজুর রহমান জানান, নুরুল আমিনের রোগটি বিরল। হাতের রক্তনালী অতিমাত্রায় ইনফেকশন হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তখনই এ রকম অবস্থা হয়। এটি বিভিন্ন কারণেই হয়ে থাকে।
নুরুল আমিনের চিকিৎসায় সাহায্য পাঠানোর জন্য এই নম্বরে ০১৭৩২২০৪১৩০ যোগাযোগ করা যাবে।