বাঙালি জাতির গৌরবময় মহান বিজয় দিবস আজ। আনন্দের এ দিনটিকে উদযাপন করতে বর্ণিল সাজে সেজেছে রাজধানী। একইসঙ্গে বিজয় উদযাপনে নেমেছে সাধারণ মানুষ। আর এতে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে শাহবাগ, রমনা পার্ক ও শিল্পকলা অ্যাকাডেমি ঘুরে দেখা যায়, জনসমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছে স্থানগুলো। এসব জায়গায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অনেকে। বন্ধুবান্ধবসহ এসেছেন কেউ কেউ।
কথা হয় রামপুরা থেকে রমনা পার্কে ঘুরতে আসা মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমনিতে বিজয় দিবস, সেইসঙ্গে ছুটির দিন। তাই পরিবারসহ ঘুরতে এলাম। শীতের এই বিকেলে পরিবারসহ ঘুরতে ভালোই লাগছে।
সেগুনবাগিচায় বসবাস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাদ্দাম হোসেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ছুটির দিন তো খুব কমই পাওয়া হয়। তাই পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরিও খুব বেশি একটা হয় না। অনেকদিন পর ঘুরতে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে ছোট্ট শিশুদের। বাবা-মায়ের সঙ্গে রমনা পার্কে ঘুরতে এসেছে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা। সে জানায়, ঘুরতে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। এখানে এসে নানারকম খেলাধুলাও করেছি।
মাইশার পাশেই খেলছিল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া রুবায়েত। আজকে কি দিবস? এটা জিজ্ঞেস করতে সে জানায়, আজ বিজয় দিবস। এই দিনে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এটা আমাদের আনন্দের দিন।
বেশ কয়েকজন বন্ধুসহ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে ঘুরতে এসেছেন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ইয়ামিন। তিনি বলেন, আজ আমাদের একটা গৌরবের দিন, আনন্দেরও দিন। তাই দিনটি উদযাপনে বন্ধুবান্ধবসহ ঘুরতে এলাম। তবে ঢাকায় তো ঘোরাঘুরির স্থান খুবই কম। এগুলো আরও বাড়ানো উচিত বলে আমরা মনে করি।
হাতিরঝিলজুড়ে বিজয়ের আনন্দ
বিজয়ের আনন্দ-উৎসব থেকে বাদ যায়নি রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলও। হাতিরঝিলের পুরো এলাকাজুড়েই মানুষ আর মানুষ, সবার মাঝেই বিরাজ করছে বিজয়ের আনন্দ।
বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিনোদনপ্রেমী মানুষের ঢল নেমেছে হাতিরঝিলে। কেউ এসেছেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে, কেউবা বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জনকে নিয়ে। কারও কারও পরনে ছিল লাল সবুজের শাড়ি, কেউবা শরীরে জড়িয়েছেন পতাকার আদলের পাঞ্জাবি। ছোট থেকে মধ্যে বয়সী অনেকেই মাথায় পরেছেন পতাকার ব্যান্ড, গালে রাঙিয়ে নিয়েছেন বিজয়ের বার্তা।
স্ত্রীর সঙ্গে ছোট্ট মেয়ে ফাইজাকে সঙ্গে নিয়ে হাতিরঝিলে এসেছেন আহসান হাবিব শাওন। তিনি বলেন, যান্ত্রিক আর রুটি রুজির এই শহরে প্রতিটি দিনই কাটে ব্যস্ততায়। এরই মাঝে পরিবারকে সময় দেওয়া আসলেই কঠিন। তাই রাজধানীবাসীর চাকরিজীবীরা কোন না কোন উপলক্ষ খুঁজে বেড়ান। আজও একটি বিশেষ দিন, আমাদের বিজয়ের দিন, ছুটির দিন। তাই পরিবার নিয়ে বের হয়ে এ হাতিরঝিলে এসেছি। ঘুরছি আরও ঘুরব। এভাবেই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস আমরা উদযাপন করছি।
চিড়িয়াখানায় শিশুদের মেলা
অন্যদিকে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ পরিবারের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন চিড়িয়াখানায়। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ চিড়িয়াখানা ছিল দর্শনার্থীতে পূর্ণ।
চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন।
মোহাম্মদপুর থেকে পরিবার ও পরিবারের ছোট সদস্যকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, চাকরির জন্য পরিবারকে ঠিকমতো সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। আজ একটু সময় বের করতে পেরেছি। তাই ওদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি।