ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা স্নাতক প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ ক্রেডিটের বেশি মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবেন না। সম্প্রীতি ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ফরম পূরণের নোটিশে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধিত যেসব শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০২০ সালের তৃতীয় বর্ষ সম্মান পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তারাই তৃতীয় বর্ষ সম্মান ২০২১ এর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এছাড়াও ২০২০ সালের তৃতীয় বর্ষ সম্মান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৩টি পত্রে অকৃতকার্য/অনুত্তীর্ণ/ অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে —
কলা অনুষদের ক্ষেত্রে (D থেকে B-) গ্রেড পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবেন।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্ষেত্রে (D থেকে B) গ্রেড পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবেন।
বিজ্ঞান অনুষদের ক্ষেত্রে (D থেকে C+) গ্রেড পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবেন।
এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ক্ষেত্রে (D থেকে A-) গ্রেড পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবে।
তবে একজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ ক্রেডিট মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবেন।
অর্থাৎ চার বছরের স্নাতকে তত্ত্বীয় বিষয়ে পূর্ণ ক্রেডিটের (চার ক্রেডিট) হিসাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫টি বিষয়ে মানোন্নয়ন দিতে পারবেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, ঢাবির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সেমিস্টার পদ্ধতি ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত (পাশ করা বিষয়ে) ২০ ক্রেডিট তথা ৫টি বিষয়ের বেশি ইম্প্রুভ দিতে পারবে না এটি বিগত কোনো ফরম পূরণের নোটিশেই উল্লেখ ছিল না। যার ফলে অনেকেই ২০ ক্রেডিট অথবা তার চেয়ে বেশি মানোন্নয়ন (পাশ করা বিষয়ে) ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছে। ফলে এখন পরবর্তী বর্ষে প্রয়োজন হলেও আর মানোন্নয়ন দেওয়া যাবে না। এই সময় এসে এমন সিদ্ধান্ত খুবই অযৌক্তিক।
সরকারি বাঙলা কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী উসমান আল হাসনাত বলেন, বিষয়টি যদি আগে আমাদের জানানো হতো তাহলে আমরা বুঝে শুনে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতাম। এখন এমন অবস্থা হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই আমরা ২০ ক্রেডিটের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেলেছি। যদি বিষয়টি প্রথম বর্ষেই জানানো হতো তাহলে শিক্ষার্থীরা সতর্কতার সঙ্গে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিতো।
তিনি বলেন, চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলছে অথচ মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের বই বের হয়েছে কিছুদিন আগে। আর যা বের হয়েছে তা ঢাবির প্রশ্নের সঙ্গে মিলে না। এমন অবস্থায় মানোন্নয়ন ছাড়া রেজাল্ট ভালো করা সম্ভব না। সবমিলিয়ে এই নিয়ম অযৌক্তিক।
এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানিয়ে তানভীর হাসান নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্তে সামগ্রিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই এটি পুনরায় বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরাও সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারাও বলেছেন শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এ. টি. এম. মইনুল হোসেন বলেন, বিষয়টি শিক্ষার্থীরা আমাদের জানিয়েছে। বিবেচনার জন্য তারা দরখাস্ত জমা দিয়েছে। আমরা কলেজ থেকে দরখাস্ত সাত কলেজের সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছি।
বিষয়টি কার্যকরের আগে সাত কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি তার আগেই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী নতুন করে এটি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও এ বিষয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সমন্বিত সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের দাবি আমলে নিয়ে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্ট্যাচার্য। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। তাদের স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের মাধ্যমে আবেদন করার জন্য বলেছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব।