নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাগাম ছাড়া। এ দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। এরইমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা; যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে এরইমধ্যে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম।
সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের সেভাবে ভূমিকা থাকে না। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের অজুহাত দেখিয়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। আর এ প্রস্তাবেই বাজারে বেড়ে যায় সয়াবিন তেলের দাম।
রাজধানীর মিরপুর-৬ ও মিরপুর-১ নম্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে পাঁচ লিটার রুপচাঁদা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা, তীর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১০ টাকা, ফ্রেশ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১০ টাকা এবং ফরচুনের ৫ লিটারের রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। এছাড়া এক লিটারের তীর সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা, রুপচাঁদা ১৯০, সূর্যমুখী ৩ লিটার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং সরিষার তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।
মিরপুর-৬ নম্বর বাজরের ব্যবসায়ী রফিক বলেন, প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। আর সয়াবিন তেলের দাম তো বাড়ার ওপরেই আছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে সয়াবিন তেলে দাম কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছে। মাঝখানে ভোজ্যতেলের সংকট হলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত তেল মজুদ আছে। তবে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি আরও ২০ টাকা করে বাড়বে। তেলের দাম বাড়লে আবারও সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়বে।
মিরপুর-৬ নম্বর বাজারে মাহমুদ নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি তেল কিনতে আসিনি। তারপরও তেলের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের ওপর চাপ বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো লিটারপ্রতি আরও ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে এই তেলের দামকে কেন্দ্র করে সবকিছুর দাম বেড়েছে। যেমন আজ আমি এক কেজি রিন পাওয়ার কিনলাম। আগে ১২০ টাকায় কিনলেও আজ কিনতে হলো ১৬০ টাকায়। এই বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই। সব জিনিসের দাম বেড়েছে।
মিরপুর-১ নম্বর বাজারের ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, আমরা আগের দামেই সয়াবিন তেল বিক্রি করছি। তবে দাম বাড়ার আশায় আছি। কারণ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তেল মজুদ আছে। তবে ডিলাররা সেভাবে তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। হয়তো তেলের দাম বাড়লে বাড়তি দামেই ডিলাররা বিক্রি করবে।
বিশ্ববাজারে সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম দ্রুত কমে যাচ্ছে। গেল জুন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেলের দাম উঠেছিল এক হাজার ৭৮১ ডলার। গত বৃহস্পতিবার তা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৫৫ ডলারে। কিন্তু দেশের বাজারে সেই তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম খুব সামান্য কমানো হয়েছে। সেটুকুও খুচরা পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। শুধু সয়াবিন তেলের দামই নয়, বিশ্ববাজারে পামঅয়েলের দামও ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। জুনে প্রতি টন পামওয়েলের দাম উঠেছিল এক হাজার ৩৬০ ডলার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬৬ ডলারে।
সবশেষ গত ২১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই দাম অনুযায়ী, এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ আছে, আর পামঅয়েলের দাম ১৫২ টাকা।
ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দিয়ে সংগঠনটি সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলছে। গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দেওয়া চিঠিতে লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকা থেকে ২০৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯১০ থেকে ৯৬০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরা মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে হালকা পরিশোধিত আকারেও বিডি পাম অয়েল আমদানি করেন। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। বছরে ২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়। এছাড়া মাড়াই করে পাওয়া যায় আরও তিন লাখ টন সয়াবিন।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ টন আমদানি হয়। ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। সুযোগটি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আছে। বর্তমানে পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পামঅয়েলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নেই।