লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে খাল থেকে নারী ও শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ১৫ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। নিহতরা মা-মেয়ে। এ ঘটনায় নিহত নারীর স্বামী জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পারিবারিক কলহের জের ধরে তিনি স্ত্রী রওশন আরা বেগমকে (৩০) গলা টিপে ও ঘুমন্ত শিশু নুসরাতকে (১) বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন।
শুক্রবার (৫ মে) দুপুরে র্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার জামাল চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের বহরীগ্রামের রুহুল আমিন মিঝির ছেলে। নিহত রওশন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার আজোলবেড়া গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে জামাল র্যাবের কাছে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছেন। ২০১৯ সালে বিয়ের পর থেকে জামাল ও রওশনের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার রায়ের বাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। গত ১৫ এপ্রিল দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী রওশনকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন জামাল। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় এক বছরের শিশু কন্যাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন।
বাসার মালামালসহ দুইজনের মরদেহ ওয়্যারড্রবে করে পিকআপভ্যানের মাধ্যমে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে জামাল ঢাকা থেকে রওয়ানা দেন। কিন্তু নোয়াখালী না গিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের দুটি পৃথক স্থানে ব্রিজের নিচে মরদেহগুলো খালে ফেলে দেন। ১৯ এপ্রিল রামগঞ্জ-সোনাইমুড়ি সড়কের পাশে খালের হানুবাইশ ব্রিজের নিচে শিশু ও পার্শ্ববর্তী আলীপুর এসপি বাড়ির সামনের ব্রিজের নিচ থেকে নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে রামগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডটি জামাল একাই করেছেন বলে জানিয়েছেন। ২০ এপ্রিল নিহত রওশনের মামা আবদুল হাই পাটওয়ারী ফরিদপুরের মধুখালী গ্রামে নিখোঁজের ডায়েরি করেন।
র্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, মরদেহগুলো উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে মা ও মেয়ে হিসেবে শনাক্ত করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ফরিদপুরের মধুখালী থানায় এক নারী ও এক শিশুর নিখোঁজের বিষয়ে জিডি রয়েছে৷ পরে নিহতের স্বজনরা এসে মরদেহ শনাক্ত করে। একইসঙ্গে প্রাথমিকভাবে নিহত রওশনের স্বামীকে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মোবাইলফোনও বন্ধ ছিল। পরে গোয়েন্দা তদন্ত ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার শ্যামপুর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (৪ মে) জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন।