আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন এখানকার খামারিরা। এবার উপজেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০টি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ২ হাজার ছোট-বড় খামারে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১৫ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো যাবে।
এদিকে, গো-খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় উপযুক্ত মুল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের আশংকা করছেন খামার মালিকরা।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস থেকে জানা যায়, কোরবানীকে ঘিরে খামারি ও প্রান্তিক চাষি মিলে এবার ১৯ হাজার ১৭৫টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৮৬টি ষাঁড়, বলদ ৭৯৯টি, গাভী ১৮৯টি, মহিষ ১৯টি, ৭ হাজার ৮২টি ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এ উপজেলায় ৬টি স্থায়ী হাট আছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা গরু ছাগল মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করেন। দেশে ভারতীয় গরু না আসলে বেশি লাভবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। উপজেলার ৬টি হাটের মধ্যে সিরাজপুর, বায়রা, সিংগাইর ও জয়মন্টপ হাট বড়। এসব হাটে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু ক্রয় করে বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। এছাড়াও স্থানীয় বেপারিরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এ এলাকায় খামারি ছাড়াও সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে দু’ একটি গরু মোটাতাজা করেন। ঈদের সময় আকারভেদে গেল বছর প্রতিটি গরু ৭০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন গবাদি পশুর খামারি ও কৃষকরা।
উপজেলার রাজেন্দ্রপুরে ফার্ম সাইড এগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী ফয়সাল বিন মালেক বলেন, শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, সেবার মানসিকতায় সম্পূর্ন অর্গানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে ফার্ম থেকে কোরবানীর জন্য গরু বাজারজাত করছি। এটা বলা যায় আমাদের নেশা, মায়া সর্বোপরি গরুর প্রতি ভালবাসা। ফার্মে জন্ম নেয়া ও ক্রয় করা শাহীয়াল, ফ্রিজিয়ান ও ভূটানি জাতের ৮০টি গরু মোটাতাজা করেছিলাম। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবগুলোই অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। যথা সময়ে ক্রেতারা গরুগুলো নিয়ে যাবেন। যে দাম পেয়েছি তাতে সন্তুষ্ট। তিনি আরো বলেন, আমার ফার্মের একেকটা গরুর ওজন আকারভেদে ১৭০ থেকে ৯০০ কেজি পর্যন্ত। বিক্রি করেছি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
রামনগর গ্রামের তাওহীদ এগ্রো ফার্মের আবু তাহের ডাক্তার বলেন, আমি ৩০টি ষাঁড় গরু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেছি। গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তারপরেও বাজার যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ লাভবান হবো।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের উপজেলায় এবার কোরবানীর জন্য ১৯ হাজার ১৭৫টি পশু মজুদ রয়েছে। চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৫৫০টি। এসব কোরবানীর গরু উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশর্^বর্তী জেলা- উপজেলা ও নগরীর বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এ এলাকার খামারিরা বিশেষ যতœসহকারে কোরবানীর জন্য গরু মোটাতাজা করে থাকেন। আমরা সার্বক্ষনিকভাবে ফার্মগুলো তদারকি করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছি।