ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক গ্লোব বায়োটেকের mRNA Vaccine বঙ্গভ্যাক্স মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেলো।
এবিষয়ে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) নির্দেশনা অনুসারে বানরের দেহে চালানো বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কিত প্রতিবেদন ০১/১১/২০২১ তারিখে বিএমআরসিতে জমা দেওয়া হয়। একই সাথে বিএমআরসির তৃতীয় ও সর্বশেষ চিঠির সকল প্রশ্নের জবাবও দেওয়া হয়! এর মধ্য দিয়ে বিএমআরসির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পূর্বশর্তসহ সকল পর্যবেক্ষনের যথাযথ উওর দেওয়া শেষ হয়! ২১/১১/২০২১ তারিখে বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ এথিক্স কমিটির সভায় মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার নৈতিক অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং ২৩/১১/২০২১ তারিখে অনুমোদন দেয়া হয়।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আমরা নৈতিক অনুমোদনের কপিসহ ২৫/১১/২০২১ তারিখে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করি। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সুপারিশক্রমে গত ০৭/০৭/২০২২ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য নির্দেশক্রমে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১৭/০৭/২০২২ তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, ডেল্টার মতো ওমিক্রনের বিরুদ্ধেও শতভাগ কার্যকর বঙ্গভ্যাক্স, বানরের পরীক্ষায় প্রমাণিত! এখন পর্যন্ত বিশ্বে অতি সংক্রমণশীল ওমিক্রন-ডেল্টাসহ করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় ছিল। আমরা প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের সিকোয়েন্স অ্যানালাইসিস করে আমাদের ভ্যাকসিনের সিকোয়েন্স মিলিয়ে দেখেছি প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই বঙ্গভ্যাক্স কার্যকর। যার প্রমাণ মিলেছে বানরের পরীক্ষায়। প্রাথমিক ফলাফলে আমাদের ভ্যাকসিনটি বানরে নিরাপদ এবং কার্যকর এন্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর আমরা ভ্যাকসিনেটেড বানরে করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন-ডেল্টাসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ স্টাডি করেছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের ভ্যাকসিনে বানরের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি সাত দিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাসকে নিউট্রালাইজ করতে পেরেছে। এতে প্রমাণিত হয় আমাদের ভ্যাকসিন অতি সংক্রমণশীল ওমিক্রন-ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ সার্স-কোভ-২ এর যে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে সেগুলোকেও নিউট্রালাইজ করতে সক্ষম। অতএব, চুড়ান্ত ফলাফলে আমাদের ভ্যাকসিন বানরে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং শতভাগ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই উন্নত বিশ্ব করোনা মোকাবিলায় যে নতুন ভ্যাকসিনের কথা বলছেন, আমরা গ্লোব বায়োটেক মনে করি, সেই নতুন ভ্যাকসিনটি হতে পারে বঙ্গভ্যাক্স! এমন অবস্থায় আমরা যৌক্তিকভাবে বিশ্বাস করি, বঙ্গভ্যাক্স টিকা বিশ্বকে এই করোনা সংকট থেকে উদ্ধার করবে । তাই আমরা যদি এ টিকা মানবদেহে পরীক্ষা শেষে বাজারে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে সারা বিশ্বে ওমিক্রন-ডেল্টাসহ করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের যে মহামারি চলছে সেটা থেকে একমাত্র বঙ্গভ্যাক্সই পরিত্রাণ দিতে পারে বলে আশা করছি। কারণ, যেসব দেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়েছে, সেসব দেশে বুস্টার ডোজ হিসেবেও বঙ্গভ্যাক্স দেওয়া যাবে।
আমরা প্রথম ধাপে, ভ্যাকসিনেটেড বানরে ডেল্টাসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ স্টাডি করেছিলাম। পরবর্তীতে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা আবার উক্ত ভ্যারিয়েন্ট প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ স্টাডি করেছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের ভ্যাকসিনে বানরের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি সাত দিনের মধ্যেই করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকেও নিউট্রালাইজ করতে পেরেছে। এতে প্রমাণিত হয়, আমাদের ভ্যাকসিন ডেল্টার মতো অতি সংক্রমণশীল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও সমান কার্যকর। বানর আর মানুষের মধ্যে জিনগত বেশ মিল থাকায় এবং বানরের পরীক্ষায় ‘বঙ্গভ্যাক্স’ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং শতভাগ কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায়, আমরা খুবই আশাবাদী যে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানবদেহেও অনুরুপভাবে কাজ করবে।
গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক আবিষ্কৃত mRNA vaccine কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে । বঙ্গভ্যাক্স টিকার টার্গেট এর সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স এনসিবিআই ডেটাবেসে জমা দিয়েছি, যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে (accession number: MT676411)। বঙ্গভ্যাক্স গবেষণা নিবন্ধটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাবলিশার্স এলসেভিইয়ারের ভ্যাক্সিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে https://doi.org/10.1016/j.vaccine.2021.05.035) এবং বঙ্গভ্যাক্স উৎপাদনের মৌলিক প্রযুক্তি ন্যাচার জার্নালের সাইন্টিফিক রিপোর্টস্এ প্রকাশিত হয়েছে (https://doi.org/10.1038/s.41598-022-12100-z)।
আমাদের টিকাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ১টি ডোজেই এনিম্যাল ট্রায়ালে কার্যকর এন্টিবডি পাওয়া গেছে। আমরা আশা করছি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও অনুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। এটি +৪°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ মাস এবং -২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাস মুক্ত এবং শতভাগ হালাল। আমরা যদি দ্রুততম সময়ে টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীর সেবায় ‘BANGAVAX’ কে উৎসর্গ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বদরবারে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।