ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিজেপির উত্তর প্রদেশ শাখার দুই মুখপাত্রের মন্তব্যের জেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ। কুয়েত ও কাতারে রীতিমত ভারতীয় দূতকে তলব করে প্রকাশ করা হয়েছে ক্ষোভ। এছাড়া আরব বিশ্বে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকও দিয়েছেন অনেকে।
রোববার এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইসলাম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো প্রতীককে অবমাননা করে— এমন মন্তব্য সৌদি আরব কখনও প্রশ্রয় দেয় না। তেমনি অন্য কোনো ধর্মের অবমাননাও আমরা সমর্থন করি না।’
একই ঘটনায় নিজ নিজ দেশের ভারতীয় দূতকে তলব করেছে উপসাগরীয় অপর দু’টি দেশ কুয়েত ও কাতার। দূতদের তলব করে উভয় দেশের সরকারই এ ঘটনার জন্য বিজেপির প্রকাশ্য ক্ষমা দাবি করেছে।
উভয় দেশের সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের সরকার যদি ‘ইসলামভীতি’ বিস্তার রোধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, সেক্ষেত্রে তা বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
পৃথক বিবৃতি ও টুইট বার্তায় নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এবং মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)।
এক প্রতিবেদনে সৌদি আরবের দৈনিক আরব নিউজ জানিয়েছে, এ ঘটনার জেরে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ভারতের আলোচিত জ্ঞানবাপী মসজিদ ইস্যুতে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন টকশোতে মহানবী (সঃ) প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। এ ঘটনা উত্তর প্রদেশের মুসলিমদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। বৃহস্পতিবার নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে টুইট করেন রাজ্য বিজেপির অপর নেতা নাভিন কুমার জিন্দাল। পরে অবশ্য সেই টুইট মুছে ফেলেন তিনি।
এদিকে, এ ঘটনার জেরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংঘর্ষ হয়েছে উত্তর প্রদেশের কানপুর জেলায়। এতে পুলিশের ২০ কর্মকর্তাসহ আরও ৪০ জন আহত হয়েছেন। বিজেপি অবশ্য নূপুর শর্মা ও নাভিন কুমার জিন্দাল— উভয় মুখপাত্রকেই রোববার দল থেকে বহিষ্কার করেছে।
পাশাপাশি এক বিবৃতিতে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভারতের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে প্রতিটি ধর্মই প্রস্ফুটিত ও বিকশিত হয়েছে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো ব্যক্তি যে কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারেন, কিন্তু এ কারণে তাকে হামলা করা বিজেপি কখনও সমর্থন করে না। বরং এ ধরনের আচরণ কঠোরভাবে নিন্দনীয়।’
দুই মুখপাত্রকে দল থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব। এদিকে, রোববার এক টুইটবার্তায় নিজ বক্তব্যের ক্ষমা চেয়েছেন নূপুর শর্মাও। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমার কথায় কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে, সেক্ষেত্রে আমি নিঃশর্তে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’