২০২১ সালের কোরবানির ঈদে ফরিদপুরের সবচেয়ে বড় গরু ছিল ৩৩ মণ ওজনের সম্রাট। গত বছর করোনা মহামারির কারণে সম্রাটকে বিক্রি করা সম্ভব না হয়নি। এবারও ফরিদপুরের সবচেয়ে বড় গরু সম্রাটই। তবে ওজন গত বছরের চেয়ে পাঁচ মণ বেড়ে এবার হয়েছে ৩৮ মণ। গরুটির দাম ১০ লাখ টাকা হাঁকছেন মালিক রফিকুল ইসলাম সবুজ (৩৫)।
সম্রাটকে দেখতে হলে যেতে হবে ফরিদপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে শহরতলীর বিল মাহমুদপুরে। ওই গ্রামে মাইশা ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার আছে। এই খামারেই সম্রাটের বসবাস। ৩৮ মণ ওজনের সম্রাটের দৈর্ঘ্য ১১ ফুট, প্রস্থ আট ফুট ও উচ্চতা ছয় ফুট।
মাইশা ডেইরি ফার্মের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, রাতে থাকার শেড থেকে সম্রাটকে যখন দিনের আলোতে বাইরে নিয়ে আসা হয়, তখন পাঁচ থেকে ছয়জন লোককে মোটা দড়ি দিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয়। যদি আগে থেকে কোনো গাছের সঙ্গে সম্রাটকে বাঁধার দড়িটা পেঁচিয়ে ফেলা না হয় তখন ঘটে বিপত্তি। নিয়ন্ত্রণে থাকা ছয়জন মানুষের করার কিছু থাকে না। সম্রাট যেদিক যায় সেদিকেই তাদের যেতে হয়। এজন্য গরুর ঘর থেকে গরুটিকে বাইরে বের করেন কম। ৩৮ মণ ওজনের সম্রাটই ফরিদপুরের সবচেয়ে বড় গরু। যেটিকে তোলা হবে এবারের কোরবানির হাটে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে এই ফার্মটি স্থাপিত হয়। এটি স্থাপন করেন রফিকুল ইসলাম সবুজ নামে এক যুবক। রফিকুল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে বিএসসি পাস করেন। এরপর তিন বছর চাকরি করেছেন একটি বেসরকারি ফার্মে। চাকরিরত অবস্থায় প্রবাসী বড় ভাই মামুনুর রহমানের অনুপ্রেরণায় এ ফার্মটি করেন তিনি। চারটি গরু নিয়ে যাত্রা করে ফার্মটি। প্রথমে দেখাশোনা করতেন ছোট ভাই সাইদুর রহমান। ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি খামারি হয়ে ওঠেন রফিকুল।
রফিকুল ইসলাম সবুজ জানান, ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটির বয়স ৪৩ মাস। সম্রাটের জন্ম এই ফার্মেই। তার মা বেঁচে নেই। জন্মের সময় সম্রাটের ওজন ছিল প্রায় ৬০ কেজি। সম্রাটকে দেখাশোনা করতেন সালাম শেখ (২২) নামে এক তরুণ। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। জন্মের সময় সম্রাট ছিল নাদুস-নুদুস। এটা যে বড়সড় একটা গরু হবে তার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। সালাম শেখ রফিকুলকে বলেছিলেন, ‘ওর নাম রাখা হোক সম্রাট। কেননা ওর আচার -আচরণ সম্রাটের মতই। কাউকেই পরোয়া করে না। এটি বড় না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি করবেন না।’
সালামের কথা রেখেছেন রফিকুল। তাই সম্রাটের জন্মের ৩২ মাস পর গত কোরবানির হাটে তাকে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিলেন রফিকুল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় সেবার আর গরুটি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। তাই ৪৩ মাস পর এ বছর কোরবানির ঈদে গরুটি তিনি বিক্রি করতে চান। দাম গত বছর চেয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা। এবারও তাই চাচ্ছেন।
রফিকুল বলেন, গত বছর করোনার কারণে সম্রাটকে কোনো হাটে উঠাতে পারিনি। বাড়িতে এসে ব্যাপারীরা দেখে বিভিন্ন দাম বলেছিল। গত বছর সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দাম উঠেছিল। এবারও বাড়িতে ব্যাপারীরা আসছেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ছয় লাখ টাকা।
তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে ওজনে পাঁচ মণসহ সবদিক দিয়েই গরুটি আরও স্বাস্থ্যবান ও পরিপক্ক হয়েছে। এবার বাড়ি থেকে সম্রাটের আশানুরূপ দাম না পেলে তিনি ঢাকার কোনো একটি হাটে নিয়ে বিক্রি করবেন।
সম্রাট ছাড়া এবার কোরবানির ঈদে আরও চারটি গরু বিক্রি করা হবে এ ফার্ম থেকে। তাদের নাম নেই। এদের ওজন ১২ মণ, আট মণ, সাত মণ এবং ছয় মণ।
রফিকুলের মা শিরিন বেগম (৫২) বলেন, এই ফার্মেই গরুটির জন্ম। ছোটবেলা থেকেই নাদুস নুদুস ছিল। চোখের সামনে গরুটা বড় হয়ে গেছে। গরুটির প্রতি মায়া জন্মে গেছে। গরুটি বিক্রির পর খারাপ লাগবে। যেহেতু বিক্রির জন্যেই পালন করা হয়েছে তাই মন খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানির ঈদে ফরিদপুরে গরু-ছাগলের চাহিদা ৪২ হাজারের মতো। জেলায় কোরবানির জন্য প্রায় ৫৩ হাজার ৮০০ গরু-ছাগল রয়েছে। সেই হিসেবে ফরিদপুরের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় ফরিদপুর থেকে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোরবানির পশু যাবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, গত বছর মাইশা ডেইরি ফার্মের গরু সম্রাটকে বিক্রি করা সম্ভব না হওয়ায় এবারও সম্রাটই জেলার সবচেয়ে বড় গরু। গরুটির মালিক ১০ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রির আশা করছেন। এই দাম ফরিদপুরের বাজারে পাওয়া কষ্টকর।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-সিলেট অঞ্চলে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাজার মন্দা থাকতে পারে। এই গরুটি ঢাকার বড় কোনো হাটে নেওয়া হলে মালিক আশানুরূপ দাম পাবেন বলে মনে করি।