১০ বছর পর প্রবাস থেকে ফিরে মালটা চাষ শুরু করেন মো. হানিফ খান। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সফলতা লাভ করেন। তার সফলতা দেখে একই বাড়ির মনোয়ার আলীসহ সাত উদ্যোক্তা মালটার বাগান করেছেন।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর দুখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে বাড়ি হানিফ খানের। তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় মালটা চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এলাকার বেকার তরুণদের।
সরেজমিনে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে বারি-১ ও বারি-৪ জাতের ১০০টি মালটার চারা রোপণ করেন। চলতি মৌসুমে তার বাগানের থোকা থোকা মালটা ঝুলছে। এ বছর দুই লক্ষাধিক টাকার মালটা বিক্রি হবে।
উদ্যোক্তা হানিফ খান বলেন, আমি সৌদি আরবে ১০ বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসি। তখন আমি ভাবলাম কিছু একটা করব। পরে আমি ইউটিউব দেখে মালটা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০১৭ সালে মালটাগাছের চারা রোপণ করি। ২০১৮ সালে কিছু গাছে ফল আসে। ২০১৯ সালে মালটাগাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। তখন ৫০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করি। ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার মালটা বিক্রি করেছি। আমার প্রায় তিন লাখ টাকা আয় হয়েছে। আর কিছুদিন পর বাগানের ফল পাকা শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাগানের মালটা খুবই মিষ্টি। আমাদের গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের মানুষ বাগানে এসে মালটা কিনে নিয়ে যায়। পাইকারিভাবে এখনো বাজারজাত করছি না।
মালটা বাগানের পরিচর্যা নিয়ে হানিফ বলেন, প্রতি মাসেই বাগানে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। গাছের পরিচর্যা করতে হয়। আমি ভালোভাবে বাগানের যত্ন নিই। আমি আরও একটি বাগান তৈরি করার জন্য চেষ্টা করছি। আমার দেখাদেখি আরও চার-পাঁচজন মালটা বাগান করেছেন। তারাও লাভবান হচ্ছেন এখন।
হানিফ খানের সফলতা দেখে বাণিজ্যিকভাবে একই বাড়ির মনোয়ার আলী খান (৭০) এবং ওই ইউনিয়নের আরও ছয় উদ্যোক্তা মালটার বাগান তৈরি করেছেন। আর কিছুদিন পর তার বাগানে থেকে মালটা তোলা হবে। তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে বাগান গড়ে তোলেন। তার মালটাগাছে বড় বড় ফলন এসেছে। তার বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছে।
মনোয়ার আলী বলেন, জমি মাটি দিয়ে ভরাট করতে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বগুড়া থেকে ৩০০ মালটার চারা কিনেছি। প্রতিটি চারা গাছ ২৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি। তবে সার, ওষুধ নিয়মিত দিতে হবে। বর্তমানে আমার বাগান ভালো অবস্থানে আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি তিন বছর আগে মালটা চাষ শুরু করি। প্রথম বছর মালটাগাছে ফুল ও ফল ধরে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম বছর মালটাগাছের ফুল ও ফল ছিঁড়ে ফেলি। গত বছর কিছু ফল আসে। এরপর তার চেয়েও তিন গুণ আসে। গত বছর ৫০ হাজার টাকার মালটা বিক্রি করেছি। আমি আশা করি এবার দুই লাখ টাকা বিক্রি করব।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান জানান, কৃষি উদ্যোক্তা হানিফ খান প্রথম যখন মালটা চাষ করেন, আমাকে জানান। আমি তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিই। আজ তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। দুই বছর পর মালটা ফল এবং আয়-ব্যয় হিসাব করেন। এতে তিনি যথেষ্ট লাভবান হওয়ায় আরও আগ্রহী হন। তার সফলতা দেখে এই ইউনিয়নের সাত উদ্যোক্তা মালটা-বাগান গড়ে তোলেন।
মালটার লাভ-লোকসান হিসাব কষে তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মালটাচাষি তার খরচ ও আয়ের হিসাব করে দেখেছেন, অন্য ফসলের তুলনায় মালটা চাষে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তাই মালটা উৎপাদনে কৃষকরা ঝুঁকছেন। প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা এ ইউনিয়নে আসেন। তারা মালটা সংগ্রহ করেন।
মালটা গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। ছত্রাক ও বিভিন্ন ধরনের পোকা আক্রমণ করে থাকে। তখন ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে এগুলো দমন করা হয়, এমর পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ জানান, মালটাচাষি হানিফ খানের দেখাদেখি মনোয়ার আলী মালটা বাগান করেছেন। আমরা তাদের কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছি। মালটাগাছের বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধ ও বাজারজাতকরণসহ যাবতীয় পরামর্শ দিচ্ছি তাদের। ইতিমধ্যে হানিফ প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। আমরা আশা করি মনোয়ার আলীও সফলতা অর্জন করবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন জানান, চাঁদপুরের আবহাওয়া ও মাটিতে মালটা চাষ করা সম্ভব। আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের মালটা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। অনেক কৃষক মালটা চাষে উদ্যোগী হচ্ছেন। আশা করি চাঁদপুরে মালটা চাষ আরও বাড়বে।