ঘুমের সমস্যা বা নিদ্রাহীনতা এখন খুব পরিচিত একটি সমস্যা। তবে ইনসমনিয়া আরও বড় সমস্যা, এর শিকার খুব বেশি মানুষ হয় না। ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত হলে পেশাদার নির্দেশিকার প্রয়োজন হয়। অপরদিকে অনেকে আছেন যারা মাঝে মাঝে স্ট্রেস, ক্লান্তি বা আরও অনেক কারণে স্বল্প সময়ের জন্য ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। ভোর পর্যন্ত ঘুমানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো ঘুমাতে ঘুমাতেই ওঠার সময় হয়ে যায়।
যদিও প্রত্যেকের ঘুমের ধরন ও সময় আলাদা তবে আমাদের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। বিশ্রাম এবং কর্মক্ষমতার জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। আপনার যদি ঘুমে সমস্যা থাকে তবে এই ঘরোয়া উপায়গুলো বেছে নিতে পারেন, এরপরও যদি সমস্যা থেকে যায় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন-
যোগ ব্যায়াম
যোগ ব্যায়াম আমাদের শরীর ও মনের জন্য উপকারী একথা জানা আছে নিশ্চয়ই? সেইসঙ্গে এটি কিন্তু আমাদের ঘুমের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। স্ট্রেস লেভেল নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যের উন্নতি ও মস্তিষ্কের উন্নতির পাশাপাশি এটি ঘুমের ধরনেও উন্নতি করে। এমন যোগ ব্যায়াম বেছে নিন যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে করা সম্ভব। ধীর এবং নিয়ন্ত্রিত যোগ ব্যায়াম মন ভালো রাখতে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। চাইলে আরও ধীরে চর্চা করতে পারেন। এই ব্যায়াম করার সময় এমনভাবে বসুন যেন আপনার শরীর স্বস্তি পায়। এটি আপনার মনোযোগ ক্ষমতা অনেকটা বাড়িয়ে তুলবে। নিয়মিত এই ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তেল ম্যাসাজ
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তেল মালিশ করলে তা ঘুমের সমস্যা দূর করতে থেরাপি হিসেবে কাজ করে। সুগন্ধি তেল ব্যবহার করলে তা উদ্বেগ, চাপ ও বিষণ্নতা কমিয়ে দেয় অনেকটাই। তীব্র গন্ধযুক্ত তেলের বদলে হালকা সুগন্ধি তেল ব্যবহার করুন। এটি বেশি স্বস্তি এনে দেবে। ঘুমের উন্নতি ব্যথা দূর করার জন্য ল্যাভেন্ডার অয়েল বেশি ভালো। যদি আপনার শারীরিক কোনো সমস্যা বা নিষেধ থাকে তবে তেল মালিশের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ
ম্যাগনেসিয়াম হলো সেই খনিজ যা আমাদের পেশী শিথিল করতে ও চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের পক্ষেও সহায়ক। ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে তা আপনার ঘুমের উন্নতি করতে পারে। তবে সঠিক মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শরীরচর্চা
শরীরচর্চার অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি মন ভালো রাখে, ওজন কমায়, শক্তি বাড়ায় এবং ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে তা হতাশা, উদ্বেগ ও চাপ কমাতে কাজ করে। সেইসঙ্গে এটি নিদ্রাহীনতা কমাতেও কাজ করে। এমন ব্যায়াম বেছে নিন যা আপনার শরীরের জন্য কাজ করবে এবং আপনার শরীরের ধরন বুঝে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত হোন। অ্যারোবিকস, জুম্বা, ওজন প্রশিক্ষণ বা যেকোনো ধরনের নাচ বেছে নিন। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা এর পেছনে ব্যয় করুন।
ডিজিটাল গ্যাজেটের সঠিক ব্যবহার
স্মার্টফোন ও অন্যান্য ডিভাইস থেকে নির্গত নীলচে আলো ঘুমের সমস্যা বাড়ায়। তাই ঘুমের সময় কোনো ভিডিও দেখা বা স্মার্টফোনে স্ক্রলিংয়ের পরিবর্তে বই পড়ুন বা হালকা ভলিউমে গান শুনুন। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার বা টিভি দেখা বন্ধ করুন। সেইসঙ্গে শোবার ঘরের বাতি নিভিয়ে দিন, এটি আপনার ঘুমের পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে।