ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের ভাগ্যে কী ঘটছে?

সুইজারল্যান্ডের শক্তিশালী ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে যে কোনো সময়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন স্থানীয় সময় শনিবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ নিয়ে একটি ফয়সালা হয়ে যেতে পারে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে সুইজারল্যান্ডের মন্ত্রিসভা একটি জরুরি বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে ক্রেডিট সুইসের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনার বিষয় ছিল— ইউবিএসের কাছে ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের দায়িত্ব (অধিগ্রহণ করা) দেওয়া।

অবশ্য সুইজারল্যান্ডের অর্থমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এমন গুঞ্জনের মধ্যে বার্তাসংস্থা রয়টার্স রোববার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্রেডিট সুইস ব্যাংক অধিগ্রহণ করতে ১ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইউবিএস। ব্যাংকটি জানিয়েছে, ক্রেডিট সুইসের প্রতিটি শেয়ার ০ দশমিক ২৭ ফ্রাঙ্ক দরে কিনতে চায় তারা। অবশ্য শুক্রবারও ক্রেডিট সুইসের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১ দশমিক ৮৬ ফ্রাঙ্ক। তবে ব্যাংকটি সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। ফলে তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটি একই রকম থাকবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার ব্যাংকটি অধিগ্রহণ করা হবে এর কোনো নিশ্চয়তাও নেই।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ব্যাংকে ধস নামার পর বিশ্বব্যাপী অজানা আতঙ্ক শুরু হয়। সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকেও এমন ইঙ্গিত দেখা দেয়। এরপর আশঙ্কা থেকে ব্যাংকটি থেকে অর্থ উত্তোলন শুরু করেন বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকরা।

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাংকটির শেয়ারের ২৫ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে ৫৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও এটির শেয়ারের দরপতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

ক্রেডিট সুইসের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি ঠেকাতে যে বন্ড ছাড়া হয়েছে সেগুলোর দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকটির যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শাখাগুলো থেকে গত সোমবার ও মঙ্গলবারের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার উত্তোলনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মর্নিংস্টার।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রকরা ইউবিএস ব্যাংকে চাপ দিয়েছে— ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা ধরে রাখতে সোমবারের আগে যেন তারা ক্রেডিট সুইসকে অধিগ্রহণ করে। এফটি জানিয়েছে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে এ নিয়ে ক্রেডিট সুইস এবং ইউবিএসের নির্বাহীদের আলাদা বৈঠক করার কথা ছিল।

অপরদিকে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে একটি খবর বের হয়, ক্রেডিট সুইস পুরো অথবা আংশিক অধিগ্রহণের জন্য আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে ব্ল্যাকরক। এ প্রতিষ্ঠানটি ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের ৪ শতাংশের মালিক। তবে খবরটিকে ভিত্তিহীন বলেছে ব্ল্যাকরক।

ক্রেডিট সুইস ব্যাংক বিশ্বের ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম। তবে বিভিন্ন কেলেংকারির কারণে কয়েক বছর ধরেই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ব্যাংকটি। গত ১২ মাসের মধ্যে এটির শেয়ারের দাম কমে গেছে ৭৫ শতাংশ। তবে এ মাসে অবস্থা সবচেয়ে বেগতিক হয়ে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি এবং সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্রেডিট সুইসে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

এরপর গত মঙ্গলবার বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ক্রেডিট সুইস ব্যাংক নিজেই। এদিন নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ আর্থিক সংস্থাটি। ১৬৭ বছর পুরোনো ব্যাংকটি স্বীকার করে তাদের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে। ব্যাংকটি আরও জানায়, তারা তাদের ঝুঁকিগুলো পরিপূর্ণভাবে ধরতে পারেনি।

এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিন সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় ক্রেডিট সুইসে আর কোনো বিনিয়োগ করবে না তারা। ব্যাংকটির ১০ শতাংশ মালিকানা কিনে নেওয়ার অংশ হিসেবে সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক গত বছর ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। সৌদি ব্যাংকটির এ সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে পড়েন।

বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যাংক জেপিমরগ্যান বৃহস্পতিবার এক মন্তব্যে জানিয়েছে, এ অচলাবস্থা কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো— ক্রেডিট সুইসকে ইউবিএস ব্যাংকের অধিগ্রহণ করা।

বিপর্যস্ত ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে অধিগ্রহণ করলে ইউবিএস ব্যাংক এটির কার্যক্রমের ইতি টানবে। আর এর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের পুরো ব্যাংকিং খাতের ৩০ শতাংশ এক জায়গায় চলে আসবে। এরমাধ্যমে ঝুঁকির মাত্রাও কমে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ