তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পঞ্চগড়ে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিএনপির গণমিছিলের কাছে আব্দুর রশিদ নামে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি পুলিশের আঘাতে নয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিএনপি তাদের কর্মীদের সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা মোটেও সমীচীন নয়।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পঞ্চগড়ে যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি বিএনপি করতেন এবং যেকোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। সেজন্য আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তবে তার মৃত্যুটা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে নয়। তিনি হৃদরোগী ছিলেন, তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। তিনি বিএনপির মিছিলে এসেছিলেন বটে কিন্তু পুলিশের সঙ্গে ঘটনা শুরু হওয়ার আগেই তিনি একটি মসজিদের সামনে অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে, তার মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকেই হয়েছে, তা বেরিয়ে এসেছে। তবে বিএনপি তাদের কর্মীদের সবসময় সংঘাতের দিতে ঠেলে দেয়, যা সমীচীন নয়। এই সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেশের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না, তাদের দলের জন্যও এ পর্যন্ত কল্যাণ বয়ে আনেনি। সাংঘর্ষিক রাজনীতি বিএনপির পরিহার করা উচিত।’
বিএনপি বারবার বলছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না— এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নির্বাচন আয়োজন করে না। নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। যখন তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন সরকারের একজন টিএনও, ওসি বদলি করারও ক্ষমতা থাকে না। আমরা চাই দেশে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। তাদের জন্মটাই তো অগণতান্ত্রিকভাবে। তারা জানে, জনগণের কাছ থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে। সে জন্য নির্বাচন নিয়ে তাদের এত ভয়। তবে তাদের এই ভীতি দূর করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের বা সরকারের নয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো ২০১৪ সালেও চেয়েছিলাম বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, তারা অংশ না নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার পথ বেছে নিয়েছিল এবং পাঁচশ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। প্রিজাইডিং অফিসারকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল, পুলিশ তো আছেই। ২০১৮ সালে তারা নির্বাচন করবে কি করবে না সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং ফলাফল আপনারা জানেন, সর্বসাকুল্যে নারী আসনসহ ৭টি আসন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হোক এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীর সরকার গঠিত হোক। আমরা ওয়াক-ওভার চাই না, আমরা খেলে জিততে চাই। আমাদের টিম অনেক শক্তিশালী। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারা যদি নির্বাচনের মাঠে আসে তাদের আমরা ভালোভাবে পরাজিত করে ২০১৮ সালের মতো ধস নামানো বিজয় অর্জন করতে পারব।’
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকে। রাজনীতির মাঠ হচ্ছে উজান ঠেলে, প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, বিএনপির অপরাজনীতি একটা চ্যালেঞ্জ, বিএনপি নানা কুশীলবদের সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী যে অপতৎপরতা আন্তর্জাতিকভাবে, দেশীয়ভাবে যে চালাচ্ছে সেটি একটি চ্যালেঞ্জ। সব চ্যালেঞ্জকে আমরা মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তারা কি করতে চায় আমরা জানি এবং সেটি মোকাবিলা করতে কি করতে হবে সেটাও আমরা জানি।’
দলের শীর্ষ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় মন্তব্য চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমার কর্তব্য হচ্ছে সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করা। আগেও আমি সততার সঙ্গে পালন করেছি। আমি বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য হিসেবে সবসময় সাংবাদিকদের সহযোগিতা পেয়েছি, ভবিষ্যতের পথ চলাতেও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই।’