করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে গত দেড় মাস ধরে কোভিড সুনামি শুরু হয়েছে চীনে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটিতে ৮ থেকে ১৫ জানুয়ারি— ৭ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৩ হাজার ৩০৭ জন রোগী।
বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক করোনা মহামারি সংক্রান্ত সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘেরর্ অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেখানে উল্লেক করাপ হয়েছে এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে চীনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়েছে ৭০ শতাংশ।
ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দেড় মাসে চীনে করোনায় ৬০ হাজার মৃত্যু হয়েছে এবং সেই তথ্য ডব্লিউএইচওকে প্রদানও করেছে দেশটির সরকার। তবে করোনা সমর্কিত সরকারি তথ্যভাণ্ডারে এখনও মৃত্যুর এই সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করেনি চীন।
এছাড়া চীনের বিভিন্ন প্রদেশে করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্যও এখন পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে। তবে সংস্থা আশা করছে, শিগগিরই প্রাদেশিক সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিশদ তথ্য প্রকাশ করবে চীনের সরকার।
২০২০ সালের ১১ মার্চ ডব্লিউএইচও করোনাকে মহামারি ঘোষণা করার পর এ রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ দীর্ঘ লকডাউন, সপ্তাহের পর সপ্তাহব্যাপী বাধ্যতামূল কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ববিধি, বাধ্যতামূলক করোনাটেস্টসহ কঠোর সব বিধি জারি করেছিল। তবে ২০২১ সালের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রায় সব বিধি উঠিয়ে নিলেও চীন সে পথে হাঁটেনি।
বরং মহামারির প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও দেশজুড়ে যাবতীয় কঠোর করোনাবিধি জারি রেখেছিল চীন। সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটির এ অবস্থান পরিচিতি পেয়েছিল জিরো কোভিড নীতি হিসেবে।
তার সুফলও অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল। মহামারির দুই বছরে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে— সেখানে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই সময়সীমার মধ্যে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৩ হাজারের কিছু বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছিল এক হাজারের কিছু ওপরে।
কিন্তু প্রায় তিন বছর কঠোর করোনাবিধির মধ্যে থাকার জেরে অতিষ্ঠ চীনের সাধারণ জনগণ গত নভেম্বরের শেষদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। জনগণের এই বিক্ষোভের পর চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে এসে সব করোনাবিধি শিথিল করে দেয় দেশটির সরকার।
তার পর থেকেই দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন শুরু। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের ভিড়ে উপচে পড়ছে এবং অনেক ওষুধের দোকানে করোনার ওষুধের যোগান শেষ হয়ে গেছে।
গত ২৯ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যেভিত্তিক স্বাস্থ্যতথ্য গবেষণা সংস্থা এয়ারফিনিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীনে কোভিডজনিত অসুস্থতায় প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার।
চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম কিংবা ওয়েবসাইটে দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য জানানো হচ্ছে না। এমনকি, চলতি জানুয়ারির শুরু থেকে সরকারি ওয়েবসাইটে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোকেও আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে আক্রান্ত-মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ না করলেও বিভিন্ন বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রায় নিয়মতই বলা হচ্ছে— দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের হাসপাতাল ও শ্মশানগুলো উপচে পড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতদেহের ভিড়ে। এই আক্রান্ত ও মৃতদের প্রায় সবার বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে।