করোনা মহামারির মধ্যে কমেনি দেশের বিত্তশালীদের আয়। নানা সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে যখন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ট হচ্ছে তখনও দেশে বাড়ছে কোটিপতি আমানতকারীদের হিসাব সংখ্যা। গত এক বছরে অন্তত এক কোটি টাকা ছিল এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৯ হাজার ৩২৫টি। এতে কোটি টাকার মোট হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫৯৭টিতে। আর দেশে করোনার ২১ মাসে (মার্চ ২০২০- ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ে ) এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২১ হাজার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের মার্চভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৩। যাদের হিসাবে জমা ছিল ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের মার্চ আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার। তাদের হিসাবে জমা ছিল ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
২০২১ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৪ হাজার ২৭২টি। ২০২২ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫৯৭টিতে। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৯ হাজার ৩২৫টি।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। শুরু হয় লকডাউন বিধিনিষেধ। বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য। মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের মতো দেশেও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেকে কাজ হারান আবার অনেকে কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতেও আমানতকারীর সঙ্গে কোটি টাকা জমার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনা হানা দেয় তখন ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। মহামারি চলাকালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই কোটিপতি হিসাবের ওই অংক এক লাখ ছাড়ায়। ২০২২ সালের মার্চ শেষে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৫৯৭টিতে। এ হিসাবে মহামারির ২৪ মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ২০ হাজার ৯৭২টি।