সারাদেশ থেকে আসা লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু না হলেও আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য প্রাথমিক আম বয়ান শুরু হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে শিল্প নগরী টঙ্গী এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে।
ইজতেমা মাঠ মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এমনকি আশেপাশের রাস্তাঘাট ও খোলা জায়গাগুলোও মানুষের পদাচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লি ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, এবারের ইজতেমার জমায়েতে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টঙ্গী ইজতেমা মাঠের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আগত মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর ইজতেমা বন্ধ থাকায় এবার লোকে লোকারণ্য হবে ইজতেমা প্রাঙ্গণ। থাকা-খাওয়ায় প্রচণ্ড সমস্যা থাকলেও হাসিমুখে তারা বলছেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই এসব কষ্টের উত্তম বিনিময় দেবেন।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে ইজতেমায় এসেছেন মো. আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, গতকাল আমরা ২০০ লোকের জামাত নিয়ে ইজতেমায় এসেছি। আসার সময়ে অনেক যানজট পোহাতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে থাকার পর হেঁটে ইজতেমা মাঠে এসেছি। রাতে এসে ঘুমানোর জায়গা নেই, চাদর বিছিয়ে রাস্তায় শুয়ে রাত কাটিয়েছি। অনেকে শুয়ার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে রাত পার করেছে। সবমিলিয়ে কষ্ট হলেও এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।
আব্দুল মোতালেব বলেন, ইজতেমা শুরু কাল থেকে, কিন্তু একদিন আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ। আমাদের আরও অনেক জামাত আসতে পারছে না। আশা করছি, অন্য বছরের চেয়ে এবার অনেক লোক বেশি হবে। মাঝে তো দুই বছর ইজতেমা হয়নি। যে কারণে ইজতেমায় আসতে মানুষের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস কাজ করছে। এক্ষেত্রে মানুষের মনের আবেগটাই বেশি কাজ করছে।
প্রথমবারের মতো ইজতেমায় এসেছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো. আকরাম খান। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও মুখে প্রশান্তির হাসি নিয়ে বলেন, এতো মানুষের জমায়েতে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমরাও নেত্রকোনা থেকে অনেকে একসঙ্গে এসেছি। সবাই একসঙ্গে অবস্থান করছি, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছি।
ইজতেমায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বিশ্ব ইজতেমা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই এখানে লোকজন আসেন। প্রতিবার দেখি আমার এলাকা থেকে অনেকেই আসে। এবার যখন শুনলাম আমাদের মাদ্রাসা থেকে বড় একটা জামাত আসছে, তখন আমিও আসার সিদ্ধান্ত নিই।
কুমিল্লা থেকে জামাত নিয়ে ইজতেমায় এসেছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, পরে আসলে ভেতরে জায়গা পাব না, তাই দুই দিন আগেই চলে এসেছি। আমরাই যে আগে এসেছি তা নয়, আরও এক সপ্তাহ আগে থেকেই মানুষ আসতে শুরু করেছে।
মাহমুদুল আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ মানুষ এখানে এসেছে, একই পরিমাণ মানুষ রাস্তায় আছে। তারাও এখানে আসবে। অন্যান্য বারের চেয়ে মনে হচ্ছে মানুষের উপস্থিতি দ্বিগুণ হবে।
ইজতেমায় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করা মো, শরিফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়েই আমরা ইজতেমায় আসি। কিন্তু এবারে মানুষের স্রোত দেখে মনে হচ্ছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় মানুষ দ্বিগুণ হবে।
এদিকে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে মাঠের পাশেই খোলা জায়গায় সারিবদ্ধভাবে বসেছে নানা দোকানপাট। তসবিহ, জায়নামাজ, আতর, টুপি থেকে শুরু করে আছে শীত নিবারণের নানা কাপড়ও। ইজতেমা চলাকালীন সময়ে এসব বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয়ও করেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতাদের পাশাপাশি কেনাকাটা করে খুশি ক্রেতারাও।
তারা বলছেন, ইজতেমায় এসে কম মূল্যে ভালো জিনিস কেনা যায়। অন্যান্য দোকানগুলোতে সাধারণ জিনিসপত্রের যে দাম থাকে, ইজতেমা মাঠে সেটা অনেক কমে কেনা যায়।