শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চল থেকে শত শত মানুষকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির ত্রাণ তৎপরতার সাথে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা এই বন্যা পরিস্থিতিকে চরম সংকট বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, কিছু এলাকায় যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার তুলনামূলক কম জনবহুল এলাকা কিম্বারলিতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এলির প্রভাবে গত সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের পর ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। এই এলাকার অনেক রাস্তাঘাট, বাড়িঘর এখন পানিতে থইথই করছে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জরুরি পরিষেবাবিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন ডৌসন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সর্বত্রই পানি আর পানি।’
তিনি বলেন, কিম্বারলির লোকজন শত বছরের ভয়াবহ এক বন্যার সম্মুখীন হয়েছেন। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।
স্টিফেন বলেন, কিম্বারলির কিছু অংশে বন্যার পানিতে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। কয়েক বছর আগের বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতি লা নিনার কারণে গত দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়াবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলছে, চলতি বছর বিশ্বের আবহাওয়া চক্রে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে প্রশান্ত মহাসাগরে টানা তিন বছর লা নিনার প্রভাব ছিল না। সাধারণত এক থেকে দুই বছর ওই অঞ্চলে লা নিনা থাকে। যে বছর লা নিনা থাকে, সে বছর প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝবরাবর তাপমাত্রা বেড়ে একটি উষ্ণ রেখা তৈরি হয়। আর বাতাস পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বয়ে যায়।
লা নিনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় কিছু অঞ্চলকে অন্তত চারটি বড় ধরনের বন্যা সংকট সহ্য করতে হয়েছে। লা লিনার প্রভাবে সাধারণত বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পায়। এরপরই দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা।
এবারের বন্যায় পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন মানুষের ফিৎজরয় ক্রসিং শহরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে ত্রাণ সামগ্রী হেলিকপ্টারে করে পৌঁছানো হয়েছে।
কিম্বারলি শহরের কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ বাসিন্দা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। তাদের মধ্যে অন্তত ২৩৩ জনকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রোববার অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো বলেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এলি দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের দিকে সরে যাওয়ায় বৃষ্টিপাত কমেছে। তবে কিম্বারলিতে ‘রেকর্ড-ভাঙা ভয়াবহ বন্যা’ পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির এই আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, অনেক রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং অনেক সম্প্রদায় এখন বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।