মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর আসতে এখনো বাকি দুই সপ্তাহ। ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর টিকিট বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। তবে থেমে নেই টিকিট কালোবাজারির দৌরাত্ম। ইতোমধ্যে লঞ্চের কাউন্টার থেকে নামে বেনামে স্লিপ সংগ্রহ করেছে টিকিটের দালালরা। যদিও নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকিট কালোবাজারি আর দালাল প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দু-এক দিনের মধ্যে মাঠে নামবে।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ করলেও তা আমাদের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ বছর এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি কবে নাগাদ অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। যতদূর জেনেছি লঞ্চের কাউন্টার থেকে স্লিপ দেওয়া হচ্ছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, বিগত বছরের তুলনায় টিকিটের দালাল আর কালোবাজারি অনেক কমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি সতর্ক রয়েছি। দু-এক দিনে টিকিটের কালোবাজারি রুখতে মাঠে প্রশাসন কাজ শুরু করবে। অগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ঈদ সার্ভিস শুরু হবে।
জানা গেছে, বিশেষ সার্ভিস ছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ২২টি বিলাসবহুল এবং বরিশালের অভ্যান্তরীণ রুটের ৩৫টি মিলে মোট ৫৭টি লঞ্চ এখন পর্যন্ত ঈদে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর সাথে আরও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ সার্ভিস যাত্রী চাপের ওপর ভিত্তি করে ঈদের পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৫৭টির মধ্যের ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোর সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমিভিআইপি, শৌখিন ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে দুই হাজারের বেশি কেবিন রয়েছে। রমজান শুরুর পর থেকেই সাধারণ যাত্রী ও তাদের স্বজনরা এসব কেবিন পেতে লঞ্চের অফিসগুলোতে কেবিন বুকিং দিতে তদ্বির শুরু করেন। অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে পাওয়ার আগেই লঞ্চের কাউন্টার থেকে টিকিটের অনুকূলে স্লিপ দেওয়া শুরু করা হয়েছে।
স্লিপ দিলেও নির্ধারিত সময়ে স্লিপ সংগ্রহকারীদের নামে কোনো কেবিন থাকে না। অর্থাৎ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যেকোন সময় যাকে ইচ্ছা কেবিন দিয়ে দিতে পারে। এ কারণে, বাড়ি ফেরার নানা ঝক্কির সঙ্গে যোগ হয় টিকিট পাওয়ার জন্য লবিংয়ের ঝক্কি। যাত্রীদের ভরসা হয়ে ওঠে কালোবাজারের দালাল চক্র।
বরিশাল নদী বন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২টি লঞ্চের দুই হাজারের মত কেবিনের অনুকূলে টিকিট কালোবাজারির দুটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। চক্র দুটি লঞ্চের কাউন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে নামে-বেনামে কেবিন কুবিং করে রাখছে। যেগুলো ঈদ সার্ভিস শুরু হলে কেবিন প্রতি দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হবে ক্রেতাদের।
যদিও এমভি সুরভী লঞ্চের কাউন্টার ইনচার্জ ফারহান ফেরদৌস বলেন, টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। এজন্য আমরা যাত্রীর নাম ঠিকানা রেখে স্লিপ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ স্লিপ জমা পড়েছে সেই পরিমাণ কেবিন দেওয়া অসম্ভব। ফলে চিন্তা করেছি লটারির মাধ্যমে কেবিন বিতরণ করা হবে।
এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন জানান, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিনের টিকিট ছাড়া হয়। পরে এসে টিকিট না পেয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে নানা অভিযোগ করেন। বাস্তবিক টিকিট কালোবাজারির সুযোগ নেই।
এমভি সুন্দরবন লঞ্চের বুকিং অফিস ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, টিকিটের কালোবাজারি ঠেকাতে ৬ এপ্রিল থেকেই আমরা স্লিপ নেওয়া শুরু করেছি। স্লিপ অনুযায়ী যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করব।