মুইনুদ্দীনের এত সম্পত্তির উৎস কোথায়!

স্টাফ রিপোর্টার, ভোলাঃ মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি আর ইসলামিক লেবাসকে ব্যবহার করে হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে গিয়েছেন ওনি বহুদূর। জন্মসূত্রে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার হায়দার আলীর ছেলে মুঈনুদ্দীন। শুরুতে ভাঙা সাইকেল আর পুরাতন সুটকেস নিয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ভোলা আসেন তিনি। তারপর অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে কিছুদূর পড়াশোনা করে স্থানীয় এক মসজিদে ইমামতির চাকুরি নেয় মুঈনুদ্দীন। কিছুদিন ইমামতি করার পর সেই মহল্লার এক নারীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে ধরা খেয়ে ইমামতির চাকুরি হারান। তারপর আলিয়া মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরি পান।
শুরুতে ভাঙা সাইকেলে চড়ে সামান্য বেতনে চাকুরী করলেও আজ তিনি কোটিপতি। নেই কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নেই অন্যকোনো চাকুরী। নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারী অর্থ আত্মসাৎ আর ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তার পা মাটিতে পড়ে না আজ।

জানা যায়, মুঈনুদ্দীন ১৯৮৪ সালে ভোলার হাজারীগঞ্জ হামিদিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসায় সহকারী আরবী শিক্ষক হিসেবে চাকুরি নেন, এরপর ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্থানীয় জামায়াত নেতা হাবিবুল্লাহর হস্তক্ষেপে তিনি একই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হন। প্রিন্সিপাল হওয়ার পরপরই বেড়ে যায় তার দৌরাত্ম। শুরু করেন শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে অদক্ষ শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তার এসব অপকর্মকে ধামাচাপা দিতে এবং দুর্নীতিতে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্যে ২০০৮ সালে জামায়াত ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামীলীগে। এরপর ২০০৯ সালে তিনি চরফ্যাশন উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি, এবং ২০১৪ সালে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন নামক সংগঠনের চরফ্যাশন উপজেলার সভাপতি হন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিনকে দিন ওনি হয়ে উঠেন এলাকার আতংক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বহু অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রশ্ন উঠে, মুঈনুদ্দীনর এত ক্ষমতার উৎস কোথায়? সরেযমীনে দেখা যায়, আ’লীগের ভোলা ৪ আসনের এমপি, এবং বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সাথে ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে গর্বভরে চালিয়ে যান তার অপরাধ জগতের কর্মকান্ড। তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে অনেকেই নিজ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রিন্সিপাল মুঈনুদ্দীন একজন নারী নির্যাতনকারী লম্পটও বটে। নিজ কায়েশ মেটানোর জন্যে তিনি একাধিক (০৩টি) বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে তার ১ম স্ত্রী গুলনাহার বেগমকে যৌতুকের জন্যে বিভিন্নভাবে অমানষিক নির্যাতন চালাতেন। দিনের পর দিন নির্যাতিত হতে হতে একসময় তার সীমা অতিক্রম হলে ২ সন্তান রেখে চলে যেতে বাধ্য হন ওনি। বর্তমানে তার দুই স্ত্রী থাকলেও তাদের উপর প্রতিনিয়তই যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে চলে অমানষিক নির্যাতন। এব্যাপারে মঈনুদ্দীনের স্ত্রীদের সাথে দৈনিক আজকের ভোলার প্রতিনিধি কথা বলতে চাইলেও তারা কোনোপ্রকার মুখ খুলেন নি, নির্যাতনের কথা জিজ্ঞেস করা হলেও চুপ থাকেন মেজো স্ত্রী নাজমা আক্তার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি ঘৃণা প্রকাশ করে বলেন, টুপি দাড়ি আর ইসলামিক লেবাসের অন্তরালে মুঈনুদ্দীনর চরিত্র হিংস্র পশুকেও হার মানাবে, মনুষ্যত্ববোধ বলতে ওর মাঝে কিছুই নেই। স্ত্রীদেরকে নির্যাতনের খবর আমরা প্রায়সময় শুনতে পাই, কিন্তু কারোরোই কিছু করার নেই, ওর যেই লম্বা হাত, কেউ কিছু বলতে গেলে ওনাকে এলাকা থেকে উচ্ছেদ হতে হবে, না হয় অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তিনি বলেন, তার স্ত্রীদের মুখ বুঝে সারাজীবন নির্যাতন সহ্য করে যাওয়া কোনো উপায় নেই। নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি রয়েছে।

এছাড়াও মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে সরকারী অর্থায়নে নিজ বাড়ির রাস্তাপাকা করাসহ সরকারী বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছে। সরেযমীনে মুঈনুদ্দীনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে বিশাল আকারের ১০ তলা একটি বিল্ডিং নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়াও বাড়িতে রাজকীয় গেট, পুকুরের ঘাটলা, মসজিদসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রকার আভিজাত্যের ছোঁয়া। একজন মাদ্রাসা প্রিন্সিপালের পক্ষে এতকিছু করা কিভাবে সম্ভব জানতে চাইলে প্রতিবেশীরা বলেন, অবৈধ পথে হাটলে এর চাইতেও বড়কিছু করা সম্ভব।
জানা যায়, প্রিন্সিপাল মুঈনুদ্দীনর অপকর্মের বিরুদ্ধে একধিক সময় একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তবুও কমছে না তার দৌরাত্ম, থেমে নেই সে। দিনকে দিন তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড যেনো বেড়েই চলছে। প্রসাশনও এক্ষেত্রে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ