পদ্মা সেতু খুলছে, ঢাকার বাজারের অপেক্ষায় শরীয়তপুরের কৃষকরা

আগে উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করতেন কৃষকরা। কিন্তু লাভবান হতেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এতে কৃষকদের লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাওয়ার অবস্থা হতো। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ঢাকার বাজারে নিয়ে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন, এমনটাই আশা করছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, পদ্মা সেতু খুলে দিলে উৎপাদিত ফসল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরাসরি বিক্রি করা যাবে। এতে যেমন ন্যায্যমূল্য নিয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরবেন, তেমনি পণ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

জানা যায়, শরীয়তপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত মাটি বেশ উর্বর। ফসলের ফলন ভালো হয় এ জেলায়। এই অঞ্চলের কৃষিপণ্য ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান। পাশাপাশি অনেকে বাজার ছাড়া ফড়িয়াদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করে দেন। এতে যেমন তাদের পণ্যের দামও কম পাচ্ছে, তেমনই লোকসানে পড়তে হচ্ছে। ফড়িয়াদের হাত থেকে হয়রানি ও গ্রামে ক্রেতা কম থাকায় বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাজার হওয়ায় ক্রেতা কম, তাই দাম পান না কৃষকরা। ঢাকার খুব কাছাকাছি হয়েও পদ্মা নদী পারাপারের বিড়ম্বনার জন্য নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ঢাকার বাজারে নিতে পারেন না। স্থানীয় বাজারের ওপর ভরসা করে চাষাবাদ করতে হয় তাদের। কখনো ভালো দাম পান, আবার কখনো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়। কেবল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য খুলে যাবে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী অথবা শ্যামবাজারে যেতে সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েক।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বছরে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয়। ২ হাজার হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আলু, ৩ হাজার ৩৬ হেক্টর জমিতে সাড়ে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ, ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন রসুন, ৬ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ২১২ মেট্রিক টন মরিচ, ২৩০ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য স্থানীয় হাটবাজারে খুচরা ক্রেতা ও ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেন কৃষকরা। এ কারণে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

জেলার সেনেচর এলাকার কৃষক আব্দুল হাকিম সরদার বলেন, শীতকালীন সবজির জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত। এখান থেকে নদী পারাপার হওয়ার কারণে আমরা ঢাকার বাজারসহ কোনো বাজারি সময়মতো গিয়ে কৃষিপণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারতাম না। তাই স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হতো। পদ্মা সেতু খুলে দিলে আমরা গাড়ি ভাড়া করে সবজি ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে পারব। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সবজি ক্রেতারাও এখানে এসে কিনতে পারবে।

ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা ইউনিয়নের কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, এখানকার চরগুলো আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। জেলায় আলু রাখার মতো কোনো হিমাগার নেই। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আমরা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ অথবা অন্য কোথাও হিমাগারে আলু রাখতে পারব। এ ছাড়া আগে আলু ঢাকা পাঠাতে হলে ফেরি করে নদী পার হতে অনেক সময় লাগত। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এতে কৃষকদের লাভ বেড়ে যাবে।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, কৃষির জন্য জাজিরা উপজেলা বিখ্যাত। আর ঢাকা হচ্ছে দেশের বড় বাজার। কৃষকরা ইচ্ছে করলে তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকার বাজারে পাঠাতে পারবেন। লাভ করতে পারলেই কৃষকরা নতুন ফসল উৎপাদনে উৎসাহী হবেন, চাহিদাও বাড়বে। কৃষকরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ