তরমুজের গুড় তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষক মৃত্যুঞ্জয়। এবার ইফতারিতে ভিন্নতা আনতে খুলনায় তৈরি হচ্ছে তরমুজের জিলাপি। মহানগরীর খালিশপুরে বিআইডিসি সড়কে চিত্রালি সিনেমা হলের সামনে ইসলামিয়া মিষ্টি ঘরে তৈরি করা হচ্ছে নতুন স্বাদের তরমুজের জিলাপি।
এখানে শুধু তরমুজের জিলাপিই নয়, মিলছে কাঁচা আমের জিলাপি, শাহী জিলাপি ও রেশমি জিলাপি। সাধারণ জিলাপিতো আছেই। তবে ক্রেতাদের নজর কাড়ছে বাহারি রং আর নতুন স্বাদের তরমুজ ও কাঁচা আমের জিলাপি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসলামিয়া মিষ্টি ঘরকে ঘিরে মানুষের জটলা। সেখানে নানা ধরনের ইফতারির পসরা সাজানো। ক্রেতারা তাদের পছন্দের মিষ্টান্ন কিনছেন। যারা মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন তারা ইফতারির জন্য জিলাপি কিনছেন। যার মধ্যে বেশি কিনছেন তরমুজ ও কাঁচা আমের জিলাপি।
কথা হয় ইসলামিয়া মিষ্টি ঘরের মালিকের বড় ছেলে আবদুস সোবহান রিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আমার বাবার। বাবার সহযোগী হিসেবে আমি ও আমার ছোট ভাই আছি। মিষ্টির ব্যবসা আমাদের অনেক পুরাতন। সেই সঙ্গে জিলাপির ব্যবসাও অনেক দিন থেকে আছে। খুলনার মধ্যে আমাদের জিলাপির সুনাম রয়েছে। আগে সাধারণ জিলাপি, শাহী জিলাপি ও রেশমী জিলাপি তৈরি করতাম। এটা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। এবার চিন্তা করলাম নতুন কী করা যায়? নতুন একটা আইটেম করা যায় কিনা? সেই থেকে তরমুজের একটা আইটেম আমার মাথায় আসলো।
তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, যশোর, নড়াইল এই অঞ্চলে প্রচুর তরমুজ হয়। তাই তরমুজ দিয়ে কিছু একটা করা যায় কিনা- এই চিন্তা থেকে ৪/৫ দিন আগে মাথায় আসলো তরমুজ দিয়ে আমি নতুন একটা আইটেম করতে পারি। সেই চিন্তা থেকে তরমুজের আইটেম শুরু করি আমরা। পরবর্তীতে আমরা এর সঙ্গে কাচা আমের আইটেমটা যোগ করি। দুইটা আইটেম বেশ সাড়া ফেলেছে। ক্রেতারা এসব খেয়েও খুব সন্তুষ্ট। যে নিচ্ছে সে বার বার নিতে আসছে। প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। প্রতি পিস সাইজের ওপর দাম কমবেশি আছে।
আবদুস সোবহান রিপন বলেন, মানুষ এটা সাদরে গ্রহণ করছে। যে কোনো অনুষ্ঠানে মানুষ এটা নিতে পারবে। যে কোনো পরিমাণ জিলাপি নিতে পারবে। এক কেজি, আধাকেজি, ২৫০ গ্রাম যে কোনো পরিমাণ।
দোকানের কর্মচারী আবীর হোসেন বলেন, বাজার থেকে ফ্রেশ তরমুজ কেনা হয়। তরমুজের লাল অংশটুকু কেটে ব্লেন্ডারে মিহি করি। সাধারণ জিলাপির মিশ্রণে পানি দেওয়া হয়। কিন্তু তরমুজের জিলাপির মিশ্রণে শুধু তরমুজের রসই দেওয়া হয়ে থাকে। সাইড ইফেক্ট করবে এমন কিছু ব্যবহার করা হয় না। তরমুজের পিওর রস দিয়ে খামির তৈরি করি। কোনো কালার ব্যবহার করা হয় না। তরমুজ কেটে বিচি ও খোসা আলাদা করে তা ব্লেন্ডারে মিহি করে ময়দা ও বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে খামির তৈরি করি।
একইভাবে আমের খোসা ও আঁটি পৃথক করে ব্লেন্ডারে দিয়ে মিহি করা হয় এবং ময়দা ও বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে তেলে ভেজে কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি হয় বলে জানালেন দোকানের জিলাপি প্রস্তুতকারক আল আমিন। তিনি বলেন, তরমুজ ও আমের খামির তেলে ভেজে চিনির শিরায় কিছুক্ষণ রেখে জিলাপি তৈরি করা হয়। তরমুজের জিলাপি আগে কখনো বানানো হয়নি। এই রমজানে এটা প্রথম আবিষ্কার। ভালোই চলছে। ভালো সাড়া পাচ্ছি। দিন দিন কাস্টমার বাড়ছে। খাইতেও খুব টেস্টি।
দোকানের কর্মচারীরা জানান, গত ১৩ এপ্রিল তরমুজের ১০ কেজি ও আমের ১৫ কেজি জিলাপি তৈরি করেন। ১৪ এপ্রিল তরমুজের ২০ কেজি ও আমের ২৫ কেজি জিলাপি তৈরি করেন। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) তরমুজের ২০ কেজি ও আমের ২৫ কেজি জিলাপি তৈরির পর বিক্রি করেছেন। সব জিলাপিই বিক্রি হয়েছে।
জিলাপি কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, খুলনায় আমার শ্বশুড়বাাড়ি। ফেসবুকে তরমুজের জিলাপি দেখে আমার স্ত্রী নিয়ে যেতে বলল। দোকান খুঁজে বের করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবুও খুঁজে বের করেছি। কাঁচা আম, তরমুজ এবং সাধারণ জিলাপি নিচ্ছি। কাঁচা আমের জিলাপি ১৫ টাকা পিস এবং ২৫০ টাকা কেজিতে নিচ্ছে। তরমুজেরটাও একই দাম। প্রথমবারের মতো নিচ্ছি।
খালিশপুরের বাসিন্দা মো. আহাদ বলেন, ফেসবুকে দেখলাম। দেখেই চলে এসেছি। দেখতে তো দারুন লাগছে। ইফতারির জন্য নিচ্ছি। খেলে বোঝা যাবে।