ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অংশে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। এ কাজের কারণে তীব্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই পথের যাত্রী ও চালকদের। ঈদে এই দুর্ভোগ বাড়বে কয়েক গুণ। তাই এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই পথের যাত্রী ও পরিবহনের চালকেরা।
যাত্রী, পরিবহন চালক ও স্থানীয়রা বলছেন, বাসে গাজীপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর পৌঁছাতে কখনো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগছে। এর মধ্যে কলেজ গেট থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোডে পোঁছাতেই লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সামান্য বৃষ্টিতে এই সময় আরও বাড়ে। বাকি সময় লাগছে স্টেশন রোড থেকে টঙ্গী সেতু ও আব্দুল্লাহপুর পার হয়ে ঢাকায় ঢুকতে।
তারা বলছেন, টঙ্গীর কলেজগেট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কটির প্রায় চার কিলোমিটার অংশ বেশি ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরপুর। এ অংশের মতো ভাঙাচোরা ও খানাখন্দ সড়কের এমন বেহাল দশা অন্য অংশে নেই। বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে এই পথে যাতায়াত করছে। এই সড়কে ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
প্রকল্পের কাজের ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন ঈদযাত্রাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। ঈদের আগে সড়কের নিচের যে অংশে কার্পেটিং বাকি আছে, সেগুলো শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) শুরুতে নির্মাণব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। ধীরগতির কারণে ব্যয় ও মেয়াদ দুইই বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। বর্ধিত মেয়াদের শেষ প্রান্তে চলে এলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৫ ভাগ।
এখনো চার ভাগের এক ভাগ কাজ বাকি। এ অবস্থায় আরেক দফা প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একটি সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে আরও দেড় বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বিআরটি প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ। সঙ্গে ব্যয় আরও ২৬৮ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে মিলগেট পার হয়ে চেরাগআলী মার্কেটের আগ পর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সেতুর পিলার। উড়াল সেতু এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। ফলে সড়কের কোথাও তিন, কোথাও দুই লেনে যানবাহন চলছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটছে পরিবহন যাত্রীদের। সড়কের কিছু স্থানে উড়াল সেতুর স্প্যান বসানো, কোথাও সড়ক মেরামত, আবার কোথাও চলছে খুঁটি স্থাপনের কাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবুও কিছুতেই কমছে না যানজট।
সাত বছর যাবৎ মালেকের বাড়ি এলাকায় ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন ফরিদপুরের মাসুদ রানা। তিনি বলেন, বছরের প্রায় সময়ই সাধারণ মানুষসহ এ মহাসড়কে চলাচল করতে যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঈদে মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তার মাত্রা বাড়ে কয়েকগুণ। খানাখন্দ অংশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি পরিবহনগুলোকে। সামান্য উদ্যোগ নেওয়া হলে মানুষের এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ কমানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
এ মহাসড়কে গত দুই যুগ ধরে বাস চালাচ্ছেন ময়মনসিংহ সদরের মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, কী পরিমাণ দুর্ভোগ যে পোহাতে হয়, তা মুখে বলে বুঝানো কঠিন। যানজটে আটকে যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনি অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করতে হয়। দিন শেষে অতিরিক্ত ভাড়া না পেলেও খরচ বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের ভোগান্তি হলেও তা নিরসনে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।