গ্যাসের দাম ধাপে ধাপে বাড়ানোর দাবি বিজিএমইএর

গ্যাসের মূল্য একবারে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বাড়ানো এবং শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বরাবর চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সই করা ওই চিঠি গতকাল মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, তৈরি পোশাক শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্জিত হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া টেরিটাওয়েল, বস্ত্রশিল্পসহ অন্যান্য খাতে অর্জিত হয় প্রায় ৮৮ শতাংশ। সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় করোনাকালীন সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শিল্প। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট চলছে। শিল্পে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন পরিচালনায় জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমানে অনিয়মিত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের কারণে কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে ১২ জানুয়ারি গ্যাসের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কিছুদিন আগে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এ অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ইতোমধ্যে কাঁচামালের মূল্য বেড়েছে। পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণের সুদহারও বেড়েছে, আগামীতে আরও বাড়বে। এতে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম অত্যধিক বৃদ্ধিতে শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। এ কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষও তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য না বাড়িয়ে সিস্টেম লস, মিটার রিডিং, অবৈধ সংযোগ ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বন্ধ করার অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, এতে সিস্টেম লস শূন্যের কোটায় আসবে।

একই সঙ্গে বৈশ্বিক সংকট লাঘবে আগামী এক বছরের জন্য আমদানিকৃত জ্বালানিপণ্যে কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তিনি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করে বলা হয়, সরকার তিনটি পদ্ধতির মাধ্যম গ্যাস সংগ্রহ করে বিপণন করে থাকে। এর একটি দেশীয় ন্যাচারাল গ্যাস, দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক আমদানিকৃত এলএনজি এবং তৃতীয়টি স্পট মার্কেট থেকে ক্রয়কৃত এলএনজি। এ তিনটির সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। আরও বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একসঙ্গে এত মূল্য না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে সহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হলে এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে।

এ অবস্থায় তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন কার্যক্রমের স্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ ও ক্রমান্বয়ে মূল্য বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ