পঞ্চগড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ, রেকর্ড তাপমাত্রায় স্থবির জীবনযাত্রা

শীতের প্রকোপে কাহিল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। জেলা জুড়ে দুদিন ধরে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ঢাকা পোস্টকে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি জানিয়েছেন।

দুদিন ধরে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রার রেকর্ডে প্রবাহমান শৈত্যপ্রবাহ। সপ্তাহ জুড়ে হিম বাতাসে ঠান্ডায় কাঁপছে এ জনপদের মানুষ। ভোর থেকেই বেলা অবধি ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে জেলার চারপাশ। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। এতে করে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলার জীবনযাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশে জেলাটির অবস্থান থাকায় এই মৌসুমে তীব্র শীতের মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের সর্ব সাধারণ মানুষেরা। বিকেল গড়ালেই উত্তর-পূর্বকোণ থেকে বইতে থাকে ঠান্ডা বাতাস। নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে ফুটপাতের দোকানগুলোতে সাধ্যমত কিনছে গরমের কাপড়। শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগের শেষ নেই খেটে খাওয়া মানুষের।

ভোর-সকালে শীতের তীব্র প্রকোপের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবুও পেটের তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দূর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রামীন নারীরা জানান, সন্ধ্যার পর বাতাসের সঙ্গে ঝরতে থাকে বরফের মতো ঠান্ডা। এ সময়টাতে মাত্রাতিরিক্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে কম্বল ও লেপ নিলেও বিছানা বরফের মতো লাগে।

চা শ্রমিক জাহেরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, আরশেদ ও আরিফ জানায়, দুদিন ধরে কুয়াশা না থাকলেও মেঘলা পরিবেশ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। এ বাতাসের কারণে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয় আমাদের।

হিমেল, সাজু, উজ্জ্বল ও সাফিনাসহ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, প্রচন্ড শীত। রাতে শীতের তীব্রতা বেশি মনে হয়। ঠান্ডার কারণে পড়ালেখা করতে কষ্ট হয়। সকালে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে প্রাইভেট ও স্কুলে যেতেও কষ্ট হচ্ছে।

এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গতকালের থেকে তাপমাত্রা আজ আরও কমেছে। শনিবার সকাল ৯টায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। উত্তর-পূর্বকোণ থেকে ৩ নটিক্যাল গতিতে বয়ে যাওয়া হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। সামনে আরও তাপমাত্রা কমবে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ