ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানরত রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী বেসরকারি যোদ্ধা বাহিনী পিএনসি ওয়াগনারের সাম্প্রতিক বিদ্রোহের জেরে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল রাশিয়ায়; কিন্তু সামরিক বাহিনী ও সেনাসদস্যদের তৎপরতার কারণে সেই আশঙ্কা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দেশের প্রতি সৎভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেছেন তিনি। বিদ্রোহের সময় ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের গুলিতে নিহত রুশ বাহিনীর পাইলটদের আত্মার প্রতিও শোক জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘সাম্প্রতিক কঠিন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বশীলতা সঙ্গে তাদের ভূমিকা পালন করেছেন। বাহিনীতে ঢোকার সময় মাতৃভূমি ও তার ভবিষ্যতকে রক্ষা করার যে শপথ আপনারা নিয়েছিলেন, সেই শপথের প্রতি আপনাদের যে আনুগত্য— তা খুবই প্রশংসার যোগ্য।’
‘প্রকৃতপক্ষে, আপনারা একটি গৃহযুদ্ধকে থামিয়ে দিয়েছেন। আপনাদের সঠিক, সুসংহত দায়িত্বশীল আচরণের জন্যই তা সম্ভব হয়েছে।’
ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পিএনসি ওয়াগনারের যোদ্ধাদের হত্যা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের যাবতীয় কৃতিত্ব ‘ছিনতাইয়ের’ অভিযোগ তুলে ২৩ জুন (শুক্রবার) রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।
পরের দিন শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করা আর এক বার্তায় প্রিগোজিন বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উৎখাত করে ওয়াগানার গ্রুপের ২৫ হাজার সেনা নিয়ে তিনি মস্কোর পথে রওনা হয়েছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত মস্কোতে ঢুকতে পারেননি ওয়াগনার যোদ্ধারা। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রুশ শহর রোস্তভেই থেমে যায় তাদের পদযাত্রা। পরে সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাদের সবাইকে ফের নিজ নিজ ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
তাদের দলনেতা ও ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন অবশ্য আর যুদ্ধেক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। শিগগিরই একটি চুক্তির আওতায় তাকে বেলারুশ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো নিজে এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছেন। সর্বশেষ রোববার রোস্তভ শহরে একটি এসইউভি গাড়িতে দেখা গিয়েছিল প্রিগোজিনকে।
মঙ্গলবারের ভাষণে পুতিন বলেন, ইউক্রেনে ওয়াগনার গ্রুপ বিদ্রোহ ঘোষণার পরও সেখানকার রুশ সেনা ও সেনা কমান্ডের মধ্যে কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি, বরং তারা সেই জটিল পরিস্থিতিতেও উর্ধ্বতন কমান্ডের প্রতি আস্থা রেখেছেন। সেই সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনী মস্কো অভিমুখে পদযাত্রা ঘোষণা করার পর ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রুস্তভ শহর থেকে মস্কো পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে তৎপরতা শনি ও রোববার পরিলক্ষিত হয়েছে— তাও প্রশংসার দাবিদার।
ভাষণের শুরুতে ওয়াগনার যোদ্ধাদের গুলিতে নিহত রুশ পাইলটদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।